নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নৃশংস হামলার সাজা ঘোষণার আগে তৃতীয় দিনের শুনানি হয়েছে
হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন হামলায় বেঁচে যাওয়া ও নিহতদের স্বজনরা। আদালতে তারা হামলাকারীর প্যারোলবিহীন সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছেন তারা। এই সাজার রায় দেখার জন্য হতাহতদের অনেক স্বজন বিদেশ থেকেও এসেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নিউজিল্যান্ডে এসে তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে।
হামলায় নিহত আব্দেল ফাত্তাহর মেয়ে সারা কাশেম বলেন, ‘সামনাসামনি আমার বাবার নিথর মরদেহে হামলার আঘাতের চিহ্ন দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। এর আগ পর্যন্তত আমি কখনোই জানতাম না সত্যিকারের ভাঙা হৃদয় কি জিনিস। সন্ত্রাসী যা করেছে তার ন্যায় বিচার পাবো কি না জানি না।’
ক্রাইস্টচার্চ হামলার সাজা ঘোষণার চার দিনের শুনানির তৃতীয় দিনে হামলাকারী ব্র্যান্টন ট্যারেন্টের সামনেই এভাবেই ক্ষোভ জানান নিহত আব্দেল ফাত্তাহর মেয়ে সারা কাশেম। পিতার প্রতি মেয়ের এমন আবেগঘন বক্তব্যে ভারী হয়ে ওঠে আদালতের পরিবেশ।
হামলায় নিহত আব্দেল ফাত্তাহর মেয়ে সারা কাশেম বলেন, ‘সামনাসামনি আমার বাবার নিথর মরদেহে হামলার আঘাতের চিহ্ন দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। এর আগ পর্যন্তত আমি কখনোই জানতাম না সত্যিকারের ভাঙা হৃদয় কি জিনিস। সন্ত্রাসী যা করেছে তার ন্যায় বিচার পাবো কি না জানি না।’
ক্রাইস্টচার্চ হামলার সাজা ঘোষণার চার দিনের শুনানির তৃতীয় দিনে হামলাকারী ব্র্যান্টন ট্যারেন্টের সামনেই এভাবেই ক্ষোভ জানান নিহত আব্দেল ফাত্তাহর মেয়ে সারা কাশেম। পিতার প্রতি মেয়ের এমন আবেগঘন বক্তব্যে ভারী হয়ে ওঠে আদালতের পরিবেশ।
‘তবে এটা জানি, গত বছরের মার্চে যে নরপশু হামলায় আমার বাবা ও আরো অনেকের তরতাজা প্রাণ গেছে সে একজন কাপুরুষ। যারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তারা কাপুরুষ।’
২০১৯ সালের ১৫ মার্চে এই শহরেরই দুটি মসজিদে নৃশংস ওই হামলাটি চালিয়েছিল অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। তৃতীয় আরেকটি মসজিদে হামলা চালানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি সে মসজিদগুলো পুড়িয়েও দিতে এবং ‘যত বেশি লোককে সম্ভব হত্যা করতে’ চেয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে আনা ৫১টি খুন, ৪০টি খুনের চেষ্টা ও সন্ত্রাসবাদের একটি অভিযোগের দায় স্বীকার করেছে সে। উনত্রিশ বছরের ব্রেন্টন টারান্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে। বিবিসি বলছে, ২৯ বছর বয়সী ট্যারেন্ট আজীবন কারাবাসের শাস্তি পাবেন, সম্ভবত কোনো প্যারোলও পাবেন না তিনি। নিউ জিল্যান্ডে এ ধরনের সাজার প্রথম ঘটনা এটি। এর আগে দেশটিতে কেউ এ ধরনের কোনো সাজার মুখোমুখি হয়নি। বন্দুকধারী ট্যারেন্ট হামলার ঘটনা সরাসরি অনলাইনে সম্প্রচার করেছিল। সে ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল আর এ ঘটনার জেরে নিউ জিল্যান্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের বন্দুক আইন পরিবর্তন করে ফেলে।
বিবিসি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বার্নাব হাওয়েজ-এর উদৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘ওই হামলার জন্য বন্দুকধারী বহু বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল। তার উদ্দেশে ছিল ‘যত বেশি সম্ভব মানুষকে হতাহত করা।’ নিউজিল্যান্ডের মসজিদ সম্পর্কে হামলাকারী তথ্য সংগ্রহ করে। মসজিদের নকশা, অবস্থান এবং আরও বিস্তারিত সব তথ্য সংগ্রহ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল, মসজিদে সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে সে হামলা করবে।’
মসজিদে হামলার আগে হামলাকারী ক্রাইস্টচার্চ শহর পরিদর্শন করেন এবং তার প্রাথমিক লক্ষ্যস্থল, আল নূর মসজিদের ওপর একটি ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। আল নূর মসজিদ এবং লিনউড ইসলামিক সেন্টারের বাইরে তিনি অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। তৃতীয় মসজিদে যাবার পথে তাকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর হামলাকারী পুলিশকে জানিয়েছেন, তার পরিকল্পনা ছিল হামলার পরে মসজিদ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া। আদালতে নিজের পক্ষে নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন ব্রেন্টন টারান্ট। প্রথম দিকে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। তবে সশরীরে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে তিনি সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। জানায় বিবিসি।