বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক হিসেব বলছে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে উৎপাদিত মোট খাদ্যের ১শ’ ৩০ কোটি টনই ফেলে দেয়া হয়। অথচ এই খাবার দিয়ে বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের অভাব পূরণ করা সম্ভব। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিশ্ব ঝুঁকি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন আর গ্রহণ, খাদ্যচক্রের এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই খাবারের অপচয় হয় দেদারছে। এরমধ্যে উৎপাদনের সময় ৫০ কোটি টন, সংরক্ষণ আর গ্রহণের সময় ৩৫ কোটি টন খাবারের অপচয় হয়। সুপারমার্কেট, দোকানপাট এমনকি বাসা বাড়ি থেকেই ৩৫ শতাংশ খাবার ফেলে দেয়া হয়। বিক্রি আর ভোক্তাচক্রেই মোট অপচয় হওয়া খাবারের এক তৃতীয়াংশের অপচয় হয়। অথচ বর্তমানে বিশ্বের ৮০ কোটি মানুষ ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে ভোগে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আর ইউরোপে যে পরিমাণ খাবারের অপচয় হয়, তার থেকে অনেক কম খাবারেই এই ৮০ কোটি মানুষকে খাবার দেয়া সম্ভব। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খাবারের অপচয় হয়।
অপচয় রোধ করে বিশ্বব্যাপী অপুষ্টিতে ভোগা লাখ লাখ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। এই খাদ্যের অপচয় রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে জাতিসংঘ। ২০৩০ সাল নাগাদ উৎপাদন থেকে বিপণন, সব ক্ষেত্রেই খাবারের অপচয় অর্ধেকে নামিয়ে আনবে তারা। এজন্য অতিরিক্ত খাবার কেনাকে নিরুৎসাহিত করা, অতিরিক্ত খাবার দান করা, খাবার সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছে এফএও। ২০১৮ সালে করা জাতিসংঘের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে খাদ্যের অপচয়ের পরিমাণ ২শ’ কোটি টনে পৌঁছাবে।
২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮শ’ ৬০ কোটিতে পৌঁছাবে। বর্তমানে যা ৭শ’ ৭০ কোটি। ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে আরো ২শ’ কোটি মানুষ যোগ হবে এই গ্রহে। বাড়তি মানুষের খাবারের যোগান দিতে হয় উৎপাদন আরো ৬০ শতাংশ বাড়াতে হবে, না হয় অপচয় বন্ধ করতে হবে
খাদ্যের অপচয় করাটা বেশ সহজ হলেও উৎপাদন কিংবা পরিবেশে এর নেতিবাচক প্রভাবটা কিন্তু বেশ বৈরি। খাদ্য উৎপাদনে অনেক বেশি পরিবেশ দূষণ হয়। কারণ খাদ্য উৎপাদনে জ্বালানি ও রাসায়নিকের ব্যবহার হয়, পাশাপাশি বনভূমি নিধন করে কৃষি জমি তৈরি করা হয়। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি গ্রিণহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। খাবার উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন এমনকি রান্নার সময় জ্বালানির ব্যবহার হয়। গরুর ফার্ম থেকে যে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় তা কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ৮৪ গুণ বেশি কাজ করে বিশ্ব উষ্ণায়নে। বিশ্বে পুরো খাদ্য ব্যবস্থায় ৩০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। এরমধ্যে খাদ্যের অপচয়ও অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবছর খাবারের অপচয়ের কারণে ৩শ’ ৩০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়ায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের পর কার্বন নিঃসরণে আর পরিবেশ দূষণে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে খাবারের অপচয়। মানুষকে আগামী প্রজন্ম, পৃথিবী, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ আর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।