দরজা দেখে ঘর; ঘরের ভেতরের রান্নাঘর, স্নানঘর, শোবার ঘরসহ ইত্যাকার তামাম ঘরের বাসিন্দার খাহেশাত খাসলত সম্বন্ধে আন্দাজ করা যায়। নাবুঝ আম আদমি সাধারণত ‘প্যাহলে দর্শনধারী, বাদ মে গুণবিচারি’ বলে বুঝদার ঘর মালিকেরা দরজার চেহারা সুরতে সাধ্যমতো শানশওকতের নিশানা রাখেন।
যে মহলের সদর দরজা যত দরাজ সে মহলের অন্দর তত আলিশান

বাদশাহ আকবর গুজরাট জয়ের স্মারক হিসেবে ফতেহপুর সিক্রিতে ‘বুলন্দ দরওয়াজা’ বানিয়েছিলেন। ৫৪ মিটার উচ্চতার এই দরজা আক্ষরিক অর্থেই ‘বুলন্দ’ বা ‘মহান’। দুনিয়ায় এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বড় দরজা কেউ বানায়নি। এই দরজা দেখে জিল্লে ইলাহি জালালুদ্দিন মুহম্মদ আকবরের ‘দৌলত কা সাহারা’ কেমন ছিল তার ধারণা পাওয়া যায়
একটি দরাজ দুয়ারের ছবি কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। ‘চোখের দরজা খুলে মনের পর্দা তুলে’ যতবার এক নম্বর বার্মিজ সেগুনের এই দুই নম্বরি দরজা দেখছি ততবারই বিরাট এক্সক্লামেটোরি আওয়াজ নাভিদেশ থেকে শ্বাসনালি বেয়ে গলা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে
কিন্তু আসছে না। কারণ আজিমুশ্বান দরজাটির মালিকের নাম আবদুল মালেক। ইতিমধ্যেই সবাই তাঁকে চিনে ফেলেছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক। গাড়ি চালিয়ে তিনি আজ স্বাবলম্বী
এই এত ধনসম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতিবিম্ব মালেক সাহেবের দরজায় যতটা প্রতিফলিত হয়েছে, অন্য কিছুতে তেমনটি হয়নি। তাঁর এমন এক কুদরতি ক্ষমতা আছে যার কারণে তাঁর কোনো কাজকারবার কর্মকর্তাদের চর্মচক্ষুতে ধরা পড়েনি। সে কারণেই তাঁর বন্ধ দরজার মতো অধিদপ্তরের কর্তাদের চোখ বন্ধ ছিল। তাঁরা নাবালেগ মা’ছুম বালকের মতো বিনম্র সারল্যে কিরে কেটে এবং জাতিকে সেই সত্যভাষণ সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করার সানুনয় আবেদন জানিয়ে বলেছেন, মালেকের বিষয়ে তাঁরা কিচ্ছুটি জানতেন না; তাঁর দরজার খবর তো জানার প্রশ্নই আসে না।
ফতেহপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজায় খোদাই করে ফারসি ভাষায় লেখা আছে: ‘মরিয়মের পুত্র ঈশা বলেছেন: দুনিয়া একটা সেতু মাত্র। এর ওপর দিয়ে পার হয়ে যাও কিন্তু এখানে স্থায়ী বাসা বাঁধতে যেয়ো না। কেউ হয়তো অনন্তকাল এখানে থাকতে চায়, কিন্তু এই জীবন স্থায়ী নয়।’
আবদুল মালেকের বন্ধ দরজায় এ ধরনের কিছু লেখা নেই। আছে লতাপাতার কারুকার্য ও বৈভবের ছাপচিত্র। ফেসবুকে সেই দরজার ছবি যতবার দেখি ততবার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কয়েকটি শব্দ এদিক–সেদিক করে মনে মনে পড়ি